By %MONIR%

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

১০০১ সালে ২৭শে নভেম্বর গজনীর সুলতান মুহাম্মদের কাছে যুদ্ধে রাজা জয়পাল সিং পরাজীত হয়৷


Post By
Kalipada Roy



১০০১ সালে ২৭শে নভেম্বর গজনীর সুলতান মুহাম্মদের কাছে যুদ্ধে রাজা জয়পাল সিং পরাজীত হয়৷
সুলতান মাহমুদ গজনী’র সামরিক অভিযানসমূহ
Amin
1 বছর ago
এম এস শহিদ : পিতা সবুক্তগীনের মৃত্যুর পর ৯৯৭ খৃস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গজনীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। ভারতে সামরিক অভিযান তার রাজত্বকালের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বীরোত্তম সুলতান মাহমুদ ভারতবর্ষে সর্বমোট ১৭ বার যুদ্ধাভিযান করেন এবং এতে তার তেত্রিশ বৎসর রাজত্বকালের ২৭ বৎসর ব্যয় হয়। ভারতবর্ষে তার বীরোচিত সামরিক অভিযানগুলো নিম্নে আলোকপাত করা হলোঃ–
সীমান্তের দুর্গ দখল : ১০০০ খৃস্টাব্দের দিকে সুলতান মাহমুদ সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে অভিযান করে সীমান্তের দুর্গগুলো অধিকার করেন। এই সীমান্ত দুর্গ–নগরগুলো নামদান ও পেশাওয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান : ১০০১ খৃস্টাব্দের দিকে সুলতান মাহমুদ জয়পালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন এবং পেশোয়ারের নিকট দশ হাজার অশ্বারোহীসহ তাঁবু ফেলেন। সবুক্তগীনের নিকট দু’বার পরাজিত হয়েও জয়পাল মুসলিম আক্রমণের বিরোধিতা ও সন্ধিশর্ত ভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। ১০০১ খৃস্টাব্দের ২৮ নভেম্বর জয়পাল বার হাজার অশ্বারোহী, ত্রিশ হাজার পদাতিক এবং তিনশত হস্তীবাহিনী নিয়ে মাহমুদের গতিরোধ করেন। তুমুল যুদ্ধে সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর কাছে জয়পাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন এবং পুত্র–পরিবার পরিজনসহ জয়পাল বন্দী হন। কতিপয় শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এ পরাজয়ের ফলে জয়পাল হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং স্বীয়পুত্র আনন্দপালের ওপর রাজ্যভার ন্যস্ত করে মুসলমানদের কাছে পরাজয়ের গ্লানি মোচনের জন্য অগ্নিশিখায় প্রজ্বলিত হযে আত্মাহুতি দেন। মাহমুদ জয়পালকে পরাজিত করে সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরবর্তী শহর উন্দ দখল করে গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
Image may contain: 1 person

ভীরার রাজার বিরুদ্ধে অভিযান : ১০০১ থেকে ১০০৪ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যস্ত থাকায় ভারতবর্ষে সামারিক অভিযান করতে পারেন নাই। কিন্তু ১০০৪–৫ খৃস্টাব্দে ঝিলামের পশ্চিম তীরের রাজ্য ভীরার রাজা বিজয় রায়ের বিরুদ্ধে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা ভঙ্গ করেন। তাই বিশ্বাসঘাতক ভীরার রাজার বিরুদ্ধে মাহমুদ সামরিক অভিযান করেন। সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর সাথে ভীরার রাজা বিজয় রায়ের নেতৃত্বাধীন হিন্দু বাহিনীর তিন দিন ধরে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জয়–পরাজয় অনিশ্চিত থাকে। কিন্তু চতুর্থ দিনে মুসলিম বাহিনীর মুহুর্মুহু প্রচন্ড আক্রমণে ভীরার দুর্গ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং হিন্দু বাহিনী পরাজয় বরণ করে। ভীরার রাজা বিজয় রায় মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং বন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। ভীরা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সুলতান মাহমুদের পদানত হলো।
মুলতান বিজয় : সুলতানের শাসনকর্তা আবুল ফাত্তাহ দাউদ গজনীর সুলতান মাহমুদের অগ্রাভিযানকে প্রতিহত করার জন্য জয়পালের পুত্র আনন্দপালের সাথে সখ্যতা স্থাপন করেন। তাছাড়া তার অনৈসলামিক কার্যকলাপ, বিদ্বেষ ও বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ আচরণে সুলতান মাহমুদ ক্রুদ্ধ হয়ে ১০০৫–৬ খৃস্টাব্দে পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে মুলতানের দিকে অগ্রসর হলেন। কারামাতী নেতা দাউদের প্ররোচনায় আনন্দপাল তার গতিরোধ করলে তিনি পরাজিত হয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অতঃপর মুলতানের শাসনকর্তা কারামাতী নেতা দাউদকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য মাহমুদ সুলতান অবরোধ করেন। সাত দিন অবরুদ্ধ থাকার পর দাউদ সুলতান মাহমুদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। কতিপয় শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। দাউদ তার ইসলাম বিরোধী ধর্মমত কারামতী পরিত্যাগ করে শরীয়ত মোতাবেক ধর্মীয় অনুশাসন পালন এবং বাৎসরিক ২০ হাজার দিরহাম প্রদানের অঙ্গীকারে বশ্যতা স্বীকার করেন। মুলতান হতে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মাহমুদ আনন্দপালের পুত্র সুখপালের ওপর শাসনভার অর্পণ করেন এবং মোঙ্গল নেতা ইলাক খানের হঠাৎ গজনী রাজ্য আক্রমণের সংবাদে তিনি দ্রুত রাজধানীতে ফিরে যান। সুখপাল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেওয়াশা শাহ উপাধি গ্রহণ করেন।
সুখপালের বিরুদ্ধে অভিযান : সুলতান মাহমুদ ও মোঙ্গল নেতা ইলাক খানের মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ চলবার সুযোগে সুখপাল ১০০৭ খৃস্টাব্দে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ইলাক খানের বিরুদ্ধে বলখের যুদ্ধ শেষে সুখপালের ধৃষ্টতার জন্য মাহমুদ মুলতান অভিযান করেন। কিন্তু সীমান্তে পৌঁছে সংবাদ পেলেন যে, ইতোমধ্যে তার আমীরগণ সুখপালকে পরাজিত ও বন্দি করেছে এবং সেইসাথে ৪ লাখ দিরহাম জরিমানা ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছে।
আনন্দপালের বিরুদ্ধে অভিযান : কারামতী নেতা আবু দাউদকে সাহায্যের জন্য ১০০৮–৯ খৃস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে ভাতিন্দা রাজ্যের রাজা আনন্দপালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন। সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আনন্দপাল ভারতবর্ষের অন্যান্য হিন্দু রাজন্যবর্গের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে উজ্জয়িনী, কনৌজ, কানিজর, দিল্লি ও আজমীরের হিন্দু রাজন্যবর্গ সৈন্য সামন্ত নিয়ে এগিয়ে আসেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন