এক্সপ্রেস নিউজের পক্ষ থেকে সবাই কে জানায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আভিন্দন। প্রতি দিন অজানা কিছু জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।
By %MONIR%
শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮
বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ২৫শে জানুয়ারি, ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷
Post By
Kalipada Roy
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ২৫শে জানুয়ারি, ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷
তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাঁকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
জন্ম ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪
সাগরদাঁড়ি, যশোর, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু ২৯ জুন ১৮৭৩ (৪৯ বছর)[১]
কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গে)
ছদ্মনাম টিমোথি পেনপোয়েম
পেশা কবি, নাট্যকার
জাতি বাঙালি
বিষয় সাহিত্য
সাহিত্য আন্দোলন বাংলার নবজাগরণ
দাম্পত্যসঙ্গী রেবেকা ম্যাকটাভিস
হেনরিতা সোফিয়া হোয়াইট
সন্তান নেপোলিয়ন
শর্মিষ্ঠা
ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ [২] ইত্যাদি। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।
জীবন সম্পাদনা
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের যখন তেরো বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন।
শিক্ষাজীবন সম্পাদনা
মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রাম শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েছেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান, সাগরদাঁড়ি, যশোর, বাংলাদেশ
তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মধুসূদন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাঁকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করত। এছাড়া কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়।
১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তাঁর "মাইকেল" নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে। তাঁর এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। রাজনারায়ণ বসু তাঁকে পরিত্যাগ করলেও, বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করছিলেন। চার বছর পর তিনি টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। বিশপস কলেজে কয়েকজন মাদ্রাজি ছাত্রের সঙ্গে মধুসূদনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। বিশপস কলেজে অধ্যয়ন শেষ করে যখন কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মধুসূদন। তখন তাঁর সেই মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে যান মধুসূদন।
Kalipada Roy
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ২৫শে জানুয়ারি, ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷
তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাঁকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
জন্ম ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪
সাগরদাঁড়ি, যশোর, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু ২৯ জুন ১৮৭৩ (৪৯ বছর)[১]
কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গে)
ছদ্মনাম টিমোথি পেনপোয়েম
পেশা কবি, নাট্যকার
জাতি বাঙালি
বিষয় সাহিত্য
সাহিত্য আন্দোলন বাংলার নবজাগরণ
দাম্পত্যসঙ্গী রেবেকা ম্যাকটাভিস
হেনরিতা সোফিয়া হোয়াইট
সন্তান নেপোলিয়ন
শর্মিষ্ঠা
ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ [২] ইত্যাদি। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।
জীবন সম্পাদনা
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের যখন তেরো বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন।
শিক্ষাজীবন সম্পাদনা
মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রাম শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েছেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান, সাগরদাঁড়ি, যশোর, বাংলাদেশ
তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মধুসূদন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাঁকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করত। এছাড়া কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়।
১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তাঁর "মাইকেল" নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে। তাঁর এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। রাজনারায়ণ বসু তাঁকে পরিত্যাগ করলেও, বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করছিলেন। চার বছর পর তিনি টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। বিশপস কলেজে কয়েকজন মাদ্রাজি ছাত্রের সঙ্গে মধুসূদনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। বিশপস কলেজে অধ্যয়ন শেষ করে যখন কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মধুসূদন। তখন তাঁর সেই মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে যান মধুসূদন।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পারিবারিক পরিচিতি:
Post By
Kalipada Roy
পারিবারিক পরিচিতি:
উনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত মহিলা কবি মান কুমারী বসু ১৮৬৩ সালে ২৫শে জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন৷ এই সুবাখ্যাত কবি যশোর জেলার কেশবপুর থানার শ্রীধরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস কেশবপুর থানার সাগরদাঁড়ী গ্রামে। তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতৃব্য রাধামোহন দত্তের পুত্র আনন্দ মোহন দত্তের কনিষ্ঠ কন্যা।
১৮৭৩ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বিবূধশঙ্কর বসুর সাথে মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়। মান কুমারী বসুর শশুরবাড়ী ছিল কেশবপুর থানার বিদ্যানন্দকাটি গ্রামে। শ্বশুর রাস বিহারী বসু ছিলেন তৎকালীন বৃটিশ সরকারের একজন নামজাদা ডেপুটি ম্যজিষ্ট্রেট। তাঁর স্মৃতি স্মরণ করে রাখার জন্য ‘রাস বিহারী ইনস্টিটিউট’ নামে তাঁর জন্মভূমি বিদ্যানন্দকাটিতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৮০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাঁদের একমাত্র কন্যা পিয়বালার জন্ম হয়। ১৮৮২ সালে বিবূধশঙ্কর কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এল. এম. এফ পাশ করে প্রথমে কলকাতায় পরে সাতক্ষীরায় ডাক্তারী শুরু করেন।
১৮৮২ সালে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মান কুমারী বসুর স্বামী বিবূধশঙ্কর বসু সাতক্ষীরায় মৃত্যুমুখে পতিত হন।
স্বামী মৃত্যু বেদনায় বিরহিনী মান কুমারী বসু স্বামীর মনোবাঞ্ছাকে স্মরণযোগ্য করে রাখার জন্যে এবং বিধবা নারীদের কর্তব্যকর্মে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে সাহিত্য সাধনায় পূর্ণোদ্যমে আত্ননিয়োগ করেন।
শিক্ষাজীবন:
শিশুকালে মানকুমারী বসুর বিদ্যাশিক্ষার সূচনা হয় পারিবারিক পরিবেশে পিতার নিকটে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তিনি মহাভারত, রামায়ণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থগুলি আয়ত্ত করে ফেলেন।
সাহিত্যচর্চা :
শৈশবকাল থেকেই লেখা-লেখির ব্যাপারে ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ ও আকর্ষণ। এই অল্প বয়সেই তিনি গদ্য ও পদ্য রচনায় হাত দেন। সংগীতের প্রতিও ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ। তিনি কীর্তনের আংশবিশেষ মুখস্থ করে নির্ভুলভাবে মধুর কণ্ঠে গাইতে পারতেন।
তাঁর লেখা কবিতার অংশবিশেষ :
“জল শুকাইয়া কূপ হয়ে গেছে মাটি
গাভীতে খেতেছে তাহে ঘাস চাটি চাটি,
আসিয়া সখী তেলেনী মারে ঝাটা লাঠি,
মোর মনে হয় বাবা, তার নাক কাটি।”
মানকুমারী বসুর বিবাহের পর স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় কবি মান কুমারী বসুর কবিতা লেখার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ১৮৭৭ সালে স্বামী বিবুধশঙ্কর বসু কলকাতায় অবস্থানকালে মান কুমারী বসু ‘পুরন্দরের প্রতি ইন্দুবালা’ নামক অমিত্রাক্ষর ছন্দে একটি কবিতা লিখে স্বামীকে পাঠিয়ে দেন।
কবিতাটির অংশবিশেষ :
“দুরন্ত যবন সবে ভারত ভিতরে
পসিল আসিয়া, পুরন্দন মহাবলি
কেমনে সাজিল বনে, প্রিয়তমা তার
ইন্দুবালা কেমনে বা করিলা বিদায় ?
কৃপা করি কহ মোরে হে কল্পনা দেবী।
কেমনে বিদায় বীর হল প্রিয় কাছে। ”
পরবর্তীতে কবিতাটি ঈশ্বরগুপ্ত সম্পাদিত মাসিক ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মান কুমারী বসুর এটিই মুদ্রিতাকারে প্রথম প্রকাশিত কবিতা।
প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ:
উনিশ শতকের গীতি কবিতার মান কুমারী বসুর কাব্য একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয় প্রসঙ্গ’ ১৮৮৪ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৮৯৬ সালে কাব্য ‘কুসুমাঞ্জলী’, ১৯০৪ সালে ‘বীর কুমার বধ’, ১৯২৪ সালে ‘বিভূতি’, ‘পুরাতন ছবি’, ও ‘শুভ সাধনা’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়।
উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখার ক্ষেত্রেও মান কুমারী বসুর হাত ও হৃদয় সচলসিদ্ধ। ১৮৮৮ সালে ‘বনবাসিনী’, ১৯২৬ সালে ‘সোনার সাখা’ এবং ছোট গল্প ‘রাজলক্ষ্ণী’, ‘অদৃষ্ট চক্র’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে পাঠকসমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি:
মান কুমারী বসু তাঁর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ দুর্লভ সম্মান ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে ‘ভুবন মোহিনী স্বর্ণপদক" এবং ১৯৪১ সালে ‘জগত্তারিনী সুবর্ণ পদক’ প্রদান করা হয়।
সমাজের বিভিন্ন সমস্যাবিষয়ক প্রবন্ধ লেখায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অন্তপুর শিক্ষার জন্য ‘শিক্ষায়িত্রী’, পল্লীগ্রামে স্ত্রী চিকিৎসক ও ধাত্রীর আবশ্যকতা বিষয়ে এবং সমাজের দুর্নীতি ও কুসংস্কার নিবারণের জন্য মূল্যবান কয়েকটি প্রবন্ধ লিখে তিনি পুরস্কৃত হন। মান কুমারী বসুর গৌরবময় কৃতিত্বের সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ভারত সরকার ১৯১৯ সাল থেকে তাঁকে অমৃত্যু বৃত্তি প্রদান করেন।
পরলোক গমন:
বাংলা সাহিত্যের এই সুলেখিকা আজীবন সাহিত্য সাধনা করে আশি বৎসর বয়সে ১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কন্যা পিয়বালার খুলনাস্থ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন।
খুলনার ভৈরব নদীর তীরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মৃত্যুর পুর্বে মধুসূদনের সমাধিলিপির ভাব অবলম্বনে ‘অন্তিম’ শীর্ষক জীবনের শেষ কবিতাটি তিনি রচনা করেন।
Kalipada Roy

বধুবরণ
বধুবরণ
আবির্ভাব
বিষন্ন বদনে বধু আছে বসে দ্বারে,
ঘর খালি, পতি তার নেই আজ ঘরে৷
শুনশান ঘন কাল আঁধার আসে ধেয়ে,
মনমরা, পতি ছাড়া অশ্রুধারা বেয়ে৷
সুখী মন পতিধন ছিল যতদিন,
উচ্ছাসে চঞ্চলা ছিল রাতদিন৷
অকালে ঝরে গেল প্রস্ফুটিত ফুল,
ভরা নদী শুকে যেন খাঁ খাঁ দুই কুল৷
বেদনাক্ত, অশ্রুসিক্ত ভেঙ্গে যাওয়া মন,
নাওয়া খাওয়া ভুলে বধু কাঁদে সারাক্ষণ৷
নেই কোন পরিজন, নেই যে ভরসা
চারিদিকে খোঁজে মন বেঁচে থাকার আশা৷
অকস্যাৎ ঝরে গেল বাঁধা বুকে আশা,
চারিদিকে ধেয়ে আসে এক অজানা কুয়াশা৷
আসছে দিন হবে ক্ষীণ, ভেবে সেই কথা,
মলিন বদনটা যেন হয়ে যায় সাদা৷
প্রতিবেশী ছিল এক ডাকত যে কাকা,
সেই জনে এসে বলে মাগো তুমি একা!
যদি তুমি মত দাও বলি এক কথা৷
মাথা নেরে বধু বলে বল তুমি কাকা,
মাগো তুমি এঅবস্থায় যদি থাক রাজী?
আমার ছেলেকে দিয়ে বিয়ে দিব আজই৷
অসহায়, নিরুপাই দু'টি চরণ ধরে,
অশ্রুভেজা দু'নয়নে কেঁদে উচ্চস্বরে৷
বাবা তুমি আমাকে তুলে নাও ঘরে,
সেই শুনে কাকাবাবু হয়ে উল্লাস,
বধু করে এনে ঘরে মহা উচ্ছাস৷
নিরুপাই পেল ঠাঁই মহা পণ্য বলে,
এমন মানবতা আর পাব কোথা গেলে?
আবির্ভাব

ঘর খালি, পতি তার নেই আজ ঘরে৷
শুনশান ঘন কাল আঁধার আসে ধেয়ে,
মনমরা, পতি ছাড়া অশ্রুধারা বেয়ে৷
সুখী মন পতিধন ছিল যতদিন,
উচ্ছাসে চঞ্চলা ছিল রাতদিন৷
অকালে ঝরে গেল প্রস্ফুটিত ফুল,
ভরা নদী শুকে যেন খাঁ খাঁ দুই কুল৷
বেদনাক্ত, অশ্রুসিক্ত ভেঙ্গে যাওয়া মন,
নাওয়া খাওয়া ভুলে বধু কাঁদে সারাক্ষণ৷
নেই কোন পরিজন, নেই যে ভরসা
চারিদিকে খোঁজে মন বেঁচে থাকার আশা৷
অকস্যাৎ ঝরে গেল বাঁধা বুকে আশা,
চারিদিকে ধেয়ে আসে এক অজানা কুয়াশা৷
আসছে দিন হবে ক্ষীণ, ভেবে সেই কথা,
মলিন বদনটা যেন হয়ে যায় সাদা৷
প্রতিবেশী ছিল এক ডাকত যে কাকা,
সেই জনে এসে বলে মাগো তুমি একা!
যদি তুমি মত দাও বলি এক কথা৷
মাথা নেরে বধু বলে বল তুমি কাকা,
মাগো তুমি এঅবস্থায় যদি থাক রাজী?
আমার ছেলেকে দিয়ে বিয়ে দিব আজই৷
অসহায়, নিরুপাই দু'টি চরণ ধরে,
অশ্রুভেজা দু'নয়নে কেঁদে উচ্চস্বরে৷
বাবা তুমি আমাকে তুলে নাও ঘরে,
সেই শুনে কাকাবাবু হয়ে উল্লাস,
বধু করে এনে ঘরে মহা উচ্ছাস৷
নিরুপাই পেল ঠাঁই মহা পণ্য বলে,
এমন মানবতা আর পাব কোথা গেলে?
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)